সারোয়ার আহম্মেদ ::
প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে বাস্তবায়িত পয়োনিষ্কাশন ও স্যুয়ারেজ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে কর্ম সম্পাদনের কথা ছিল পুরো প্রকল্পের। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরীতে কোনো সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ও একনেক সভায় গুরুত্ব না পাওয়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্প অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
এক হাজার কোটি টাকার ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দুই বছর ধরে ঝুলে থাকলেও সর্বশেষ একনেক সভাতেও এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অন্যদিকে প্রকল্পের কাজে কমিশন বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ফাঁকিবাজির ফলে ইতোমধ্যেই দেয়ালের কয়েক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে বিতর্কের কবলে পড়েছে ওয়াসার ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রকল্পটি। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের প্রথম সুয়্যারেজ প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম। প্রথম পর্যায়ের হালিশহর ক্যাচমেন্ট এরিয়ার কাজের নির্মাণব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত। সেই হিসেবে প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস, কনসালট্যান্ট নিয়োগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্ব, প্রকল্পের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তনসহ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিবেচনায় এনে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ২০২২ সালে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করে ওয়াসা। এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন সময় প্রস্তাব করা হয় আরডিপিপিতে।
ওয়াসার কর্মকর্তারা শেষবেলাকে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আসবে। বাসা-বাড়ির বর্জ্য ও পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগার হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। ফলে নগরের কোনো সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না।
এদিকে সর্বশেষ অন্তর্বতী সরকারের প্রথম একনেক সভা (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়। ওইদিন সভাশেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন, কিছু প্রকল্প অনেকদিন ধরে ঝুলে আছে, সেগুলো দেখা হবে। নিরপেক্ষভাবে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য নতুন প্রকল্পকগুলোই শুধুমাত্র একনেকে অনুমোদন হবে। চলমান প্রকল্প কোন পর্যায়ে আছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। ১৯৬৩ সালে ওয়াসা সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনকাজ শুরু হলেও এখনো ওয়াসা পানি সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। পয়োনিষ্কাশন বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ ৫০ বছর পর ওয়াসা পয়োনিষ্কাশন-প্রকল্প গ্রহণ করে। পরিকল্পিত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়তে ২০১৭ সালে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছিল ওয়াসা। যেখানে চার দশকে এ খাতে ২৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।