ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, শেরপুর ::
ভারী বৃষ্টির পানি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টিতে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে এবং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোর থেকে । পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
চেল্লাখালী, মহারশি ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাত স্থান ভেঙে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকাসহ শ্রীবরদীর শতাধিক গ্রাম ডুবে গেছে।
বন্যায় পানিতে প্রাণ হারানো তিনজনের মধ্যে দুইজনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন বাঘবেড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী অমিজা খাতুন (৪৫), নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী, অপর একজনের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন-নামা বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন, নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়নগর এলাকার বাছের আলীর ছেলে আবুল হাতেম ও আলমগীর হোসেন ।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন শেষবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুইজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। একজনের পরিচয় জানা যায়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৩২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মহারশি নদীর খৈলকূড়ায় তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঝিনাইগাতী উপজেলায় নদীর পানি অনেকাংশেই কমে গিয়েছে, বর্তমানে ধানশাইল, মালিঝিকান্দা, ঝিনাইগাতী সদর, গৌরিপুর ও হাতিবান্দা ইউনিয়নের নিচু এলাকার ২৫টি গ্রামে পানিতে থৈ থৈ, আমান আবাদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
এছাড়া নালিতাবাড়ীর মণ্ডলিয়াপাড়া, শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই ও চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। এতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে, নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, নালিতাবাড়ী-ধারা সড়ক, এছাড়া জেলার প্রতিটি শহরে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর অন্তত ২১টি ইউনিয়ন। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল।
রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না এসব এলাকার লোকজন। ফলে মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রীবরদীর প্রায় ছয়টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে।
ধানশাইল বাজারের ব্যবসায়ী আলী আজগর বলেন, আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছিল, আজকে পানি নেমে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কিন্তু কেউ এদিকে নজর দেয় না। এর জন্য নদীর স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।
কৃষক রমিজ উদ্দীন বলেন, ফসল নষ্ট হলে আমরা বাঁচবো কেমনে। আমাদের সব ফসল পানির নিচে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, দ্রুত পানি নেমে না গেলে ব্যাপক ক্ষতি হবে কৃষকের। এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও গো খাদ্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।