গণফোরাম চায় রাষ্ট্র সংস্কার, এলডিপির দাবি আগে আ’লীগ নিষিদ্ধ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ::
জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয় আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে দ্রুত আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আহবান জানিয়েছে গণফোরাম। আর এলডিপি বলছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন দুই দলের নেতৃবৃন্দ।

আটটি দিবস বাতিল করা বিষয়ে এক প্রশ্নে গণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়।

সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে গণফোরাম সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারসহ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব কয়েকদিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দেওয়ার কথাও জানান মিজানুর রহমান।

এর আগে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দলটির নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন। নয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।

এদিকে একিই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ দল নিষিদ্ধসহ ২৩ দফা দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির কথা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, যারা আমাদের ছেলেমেয়েদের হত্যা করেছে তারা কি আমাদের দুলাভাই। তাদের কি আমরা নরম বিছানায় শোয়ায়ে রাখব।

এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, নির্বাচন দেবেন কি? সব চোর-ডাকাতরা যদি থেকে যায়। যারাই দুর্নীতি করেছেন তাদের বিচার করতে হবে। যারা আমার ছেলেমেয়েদের হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যারা জনগণে টাকা লুণ্ঠন করেছে তাদের থেকে সেই টাকাগুলো নিয়ে আসতে হবে। তারপরে নির্বাচন করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদের তো ফাঁসি দিয়েছেন, এখন আওয়ামী লীগকে ফাঁসি দিতে হবে। জামায়াতকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, এখন আওয়ামী লীগকে ফাঁসি দেন।

অধ্যাপক ইউনূসকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, আমরা বলেছি সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যান। আমরা আপনাদের সর্বতোভাবে সাহায্য করব। কারণ এটা একটা ওয়ার টাইম সরকারের মতো। এটা পিস টাইম সরকার না। ওয়ার টাইম সরকারকে যা করতে হয়, কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। এখানে সহজ-সরলভাবে কিছু করার অবকাশ নেই। যারা অন্যায় করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।

তিনি বলেন, হাসিনার যারা কট্টর সমর্থক ছিল তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনে জেলে নিক্ষেপ করতে হবে।

অলি আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের যারা সমর্থক ছিলেন, তারা শেখ হাসিনাকে এখনো সাহায্য করছেন। তারা চিহ্নিত ব্যক্তি, তাদের চিহ্নিত করার কোনো প্রয়োজন নেই।

যারা জনগণের টাকা লুট করেছেন তাদের আর্মি অথবা পুলিশের ব্যারাকে নিয়ে ফ্লোরে শোয়ানোর পরামর্শ দিয়ে এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, অনেক দিন তো নরম বিছানায় শুয়েছেন। যে টাকা তারা লুট করেছেন সেগুলো রাষ্ট্রকে পরিশোধ করতে বাধ্য করা হোক, তাহলে দেশ লাভবান হবে।

২৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, আজকেও আমরা ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। এই ২৩টি প্রস্তাব দেশের জনগণের জন্য যা প্রয়োজন, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য, গরিব, মেহনতি মানুষ যারা দ্রব্যমূল্যের কারণে কষ্ট পাচ্ছে তাদের সুবিধার জন্য এই পয়েন্টগুলো আমরা দিয়েছি।