আমতলীতে ঢেঁকির কদর কমে গেলেও, থেমে নেই চাহিদা পুরন

এস এম সুমন রশিদ,বরগুনা প্রতিনিধি:
গ্রাম-গঞ্জে অতীত দিনের কথা ভাবতে গেলে এমনটাই দেখা যেত আনন্দ,বিনোদনের পাশাপাশি পিঠা খাওয়ার উৎসবও ছিলো বেশ আলোচিত।আজ কালের স্রোতে আর সময়ের বিবর্তনে হারানোর পথে অনেক পুরানো দিনের ঐতিহ্য।তবে এগুলো হারানোর আরো একটি ঐতিহ্য হচ্ছ ঢেঁকি।সঙ্কায় কোন একদিন পুরোটাই থেমে যাবে পুরোনো দিনের ঐতিহ্যগুলো। এবং আধুনিকতার ছোয়ায় ভেসে যাবে সব পুরোনো দিনের ঐতিহ্য সংস্কৃতি,আদর্শ,রুচি ও মনোবাঞ্ছনা।
সেই সাথে হাড়িয়ে যাচ্ছে ঢেঁকির কদর,আগেরকার দিনে মলিদা(চালমাখা)খাওয়ার আযোজন হলেই তার আগের দিনে নারীরা ঢেঁকির ত্রুটিগুলো সমাধান করে প্রস্তত করতো ঢেঁকিগুলোকে।যাতে ওইদিন চালের গুড়া করা প্রস্তুত করতে সমস্যা না হয়।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। অতীতে গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ধান থেকে চাল তৈরির জন্য কিংবা চালের আটা তৈরির জন্য একমাত্র ঢেঁকিই ছিল ভরসা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা মিলত ঢেঁকির। প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ঢেঁকি ব্যবহার হয়ে আসছে। তখন বাংলার ঘরে ঘরে ঢেঁকিই ছিল একমাত্র মাধ্যম। বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ঢেঁকি গৃহস্থের সচ্ছলতা ও সুখ সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে প্রচলিত ছিলো।

বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে আগেকার দিনের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির ব্যবহার। বাংলার গ্রামীণ রমণীরা ধান ভানা, হলুদ, মরচি, মটরশুঁটি, ডাল গুঁড়ো ও পৌষ-পার্বণে পিঠা তৈরির জন্য চালের গুঁড়ো করতে ঢেঁকি ব্যবহার করতেন। এখন আর গ্রাম-বাংলায় ঢেঁকি দেখা যায় না বললেই চলে।

এক সময় আমতলীর গুলিশাখালী,কুকুয়া,হলদিয়া, আঠারোগাছিয়া,চাওড়া,আমতলী,আরপাংগাশিয়া ইউনিয়নসহ ফকিরখালি,কালিবাড়ি, গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম-অঞ্চলে প্রতিটি পরিবারেই ধান-চাল গুঁড়ো করার জন্য ঢেঁকির প্রচলন ছিলো। ধান থেকে চাল আর চাল থেকে আটা। এ দুটোই প্রস্তুতের একটি মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকি পাড়ে ধুম পড়তো নতুন ধানে আটা তৈরির। এ এলাকার নারীরা ধান, গম, চালসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। বিশেষ করে নবান্ন উৎসব পিঠা খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকির গুঁড়ায় নানা বাহারী নক্সাদার পিঠা তৈরী হতো।

সে সময় গ্রামের বধূদের ধান ভাঙার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারিদিকে চলতো হৈ চৈ আর আনন্দ। অনেক পরিবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই আদিকালের ধান ভাঙানের এ কাঠের উপকরণটি। এক সময় ঢেঁকি নিয়ে কবি সাহিত্যিকরা কত না কবিতাই রচনা করেছেন আর বাউলরা গেয়েছেন গান। আজ আর সেই দিন নেই।

আমতলীর গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মরহুম মোক্তার আলী মেম্বরের নাতিন ফরিদা বেগম বলেন, আমি যখন প্রথম শ্বশুর বাড়িতে এসেছিলাম। তখন থেকে শাশুড়ির সঙ্গে ভোর বেলায় ঢেঁকিতে পাড় দিতে যেতাম। ঢেঁকির চালের ভাত লালচে বর্ণের হতো তবে খুব সুস্বাদু।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা শৈলেন বাড়ই বলেন, একসময় এ অঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার ব্যাপক প্রচলন ছিল। ঢেঁকিতে ভাঙা চালের ভাত অনেক সুস্বাধু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। সভ্যতায় যাত্রাপথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষেই তা বিলুপ্ত হতে চলেছে।