যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘বাস্তব অগ্রগতির’ প্রত্যাশা করছে হামাস

আন্তর্জতিক ডেস্ক:

গাজা যুদ্ধ বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে ‘বাস্তব অগ্রগতির’ প্রত্যাশা করছে হামাস—শনিবার কায়রোতে মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের প্রেক্ষাপটে এক কর্মকর্তা এ কথা জানান।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় জিম্মিদের মুক্তি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেছেন এমন এক সময় এ আলোচনা শুরু হচ্ছে।

এক হামাস কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, তারা আশা করছেন মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হবে।যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আশা করি, বৈঠকে যুদ্ধ অবসান, আগ্রাসন বন্ধ এবং গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে একটি চুক্তির পথে বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হবে।’

সংগঠনটির প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য মতে, ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত খসড়া নথিপত্র বিনিময়ের কথা বলা হলেও হামাস এখনও নতুন কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘তবে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার’ অভিযোগও করেন।

ইসরাইলের অভিযান অব্যাহত টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, মিসরের প্রস্তাবের আওতায় আট জীবিত জিম্মি ও আট মৃতদেহ মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এর বিনিময়ে ৪০ থেকে ৭০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি এবং বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউজে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা (গাজায় থাকা) জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’ ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে, এটি এখন কেবল কয়েক দিনের ব্যাপার।’

ইসরাইল ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করে, যা দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির ইতি টানে। হামাস-শাসিত গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ১,৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরাইল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলার অনেকগুলোতে ‘শুধু নারী ও শিশু’ নিহত হয়েছে।প্রতিবেদনটিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ যেভাবে গাজাবাসীকে নতুন এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে, তা জনগণকে জোরপূর্বক ক্রমেই সংকুচিত জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে এবং এতে গাজায় ‘ফিলিস্তিনিদের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে টিকে থাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাস্তব উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছে।

শনিবারও ইসরায়েলের অভিযান অব্যাহত ছিল। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, ওইদিন সকালে গাজা সিটিতে একটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলা চালানো হয়।

হামলার পর এএফপির ধারণ করা ভিডিওতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে সাদা কাফনে মোড়ানো চার পুরুষের মরদেহ দেখা যায়। দাফনের আগে কয়েকজন ব্যক্তি প্রার্থনায় অংশ নেন। ১৭ মার্চ শেষ হওয়া যুদ্ধবিরতিতে গাজা থেকে ৩৩ জন জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল— যাদের মধ্যে আটজন মৃত ছিলেন। একই সময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে প্রায় ১,৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পায়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের মাধ্যমে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এতে ১,২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিল, ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপির হিসাব অনুযায়ী বেসামরিক মানুষ।

মারাত্মক ওই হামলায় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে এখনো ৫৮ জন গাজায় রয়েছে—এদের মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে অন্তত ১,৫৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০,৯১২ জনে।