চিকিৎসক ও জনবল সংকটে আমুয়া হাসপাতাল: চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত লক্ষাধিক মানুষ

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুলা হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্যাথলজিক্যাল মেশিনারিজ নষ্ট থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার দু’লক্ষাধিক মানুষ।

অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ কাঠালিয়া উপজেলায় একটিমাত্র সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসকসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪৫ টি পদ শূন্য থাকায় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ৮-১০ বছর ধরে ব্যবহার না করা ও অযন্ত অবহেলায় ফেলে রাখা হাপাতালের কোটি কোটি টাকার অত্যাধুনিক দুটি এক্সে মেশিন(ডিজিটাল), একটি ইজিজি ও প্যাথলোজী ল্যাবের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো হাসপাতালটি এখন দূরারোগ্য ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে।

১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৬১ বছরের পুরানো ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, কনসালটেস্ট, চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিষ্ট, ষ্টোরকিপার ওয়ার্ডবয়, আয়া, গার্ড ও পরিচ্ছন্নকর্মীসহ ৪৫ টি পদ শূন্য রয়েছে। অত্যাধুনিক ভবন, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, সুসজ্জিত ওটিসহ প্রয়োজনীয় এক্সে ও প্যাথলজিক্যাল সরঞ্জামাদির সুবিধা থাকা সত্বেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ গুরুত্ব¡পূর্ণ বিভিন্ন পদে জনবলের অভাবে সার্জারী (অপরারেশ), এক্সে ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসীা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২মে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলোজিস্ট) মারা যাওয়ায় পদটি শুন্য হয়। এরপর অন্যকোন টেকনোলজিস্ট এ হাসপতালে যোগদান না করায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে হাসপাতালে এক্সে রুমটি বন্ধ রয়েছে। বছরের পর বছর ব্যবহার না করায় অত্যাধুনিক দুটি ডিজিটাল এক্সে মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্যাথালোজি ল্যাবের অবস্থা আরো করুন। প্যাথালোজি যন্ত্রপাতি ও দুটি পদের একজন জনবলও না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাহিরের প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা প্যাথলোজীর ধারস্ত হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ১জন, ৭ জন মেডিকেল অফিসার, ১০ জন কনসালটেন্ট এব্ং ১জন ডেন্টাল সার্জনের পদ রয়েছে। বর্তমানে এ হাসপাতালে টিএইচও, আরএমও ও ২জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন। দীর্ঘ দিন যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ ১৫ জন চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে এ স্বস্থ্যকমপ্লেক্সটিতে। বিশেষ করে স্টেশন সার্জন, গাইনী, সার্জারি, মেডিসিন, এনেস্থেসিয়া, ডেন্টাল, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসার, ৩ ইউনিয়নের এফডব্লিউসি এবং ২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ২ জন মেডিকেল অফিসার, ২জন নার্সের পদ শূন্য রয়েছে। ৩য়-৪র্থ শ্রেনীর ৫৬ টি পদের বিপরীতে ২৮ জন কর্মরত থাকলেও বর্তমানে ১জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিও গ্রাফার), ২জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফিজিও), ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফার্মসিস্ট), ২ জন চিকিৎসা সহকারী, কপ্টিউটার অপরাটের, হেলথ এডুকেশন, স্টোর কিপার, কার্ডিও গ্রাফার, কম্পাউন্ডার ১জন করে। স্বাস্থ্য সহকারী ১২ জন, অফিস সহায়ক ৫ জনের পদ বছরের পর বছর শূন্য রয়েছে। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৩ জন, ওয়ার্ড বয় ৩ জন ও আয়া ২জনের পদ শূন্য থাকায় চরম বিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগীদের অভিযোগ, এ হাসপাতালে ডাক্তার সংকট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার লোকজন না থাকায় বাধ্য হয়ে আমারা (রোগীরা) কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভান্ডারিয়া, রাজাপুর, বেতাগী, ঝালকাঠি সদর ও বরিশালের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করে চিকিৎসা নিচ্ছি। এ হাসপাতাল নামেই হাসপাতাল। এখানে আসলে সময়মত ডাক্তার পাওয়া যায় না। আর সব টেস্টই বাহির থেকে করাতে হয়।

অতিসম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি লাইনে শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষমান রোগীদের অধিকাংশ উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও সর্দি-কাশির সমস্যা নিয়ে এসেছেন। সেবা নিতে এসেছেন প্রসূতি নারীরাও। দু’জন চিকিৎসকের শতশত রোগীদের চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতালে দেখা হয় বাশবুনিয়া গ্রামের মোঃ ছগির হোসেনের সাথে। তিনি জানান, জ্বর ও মাথা ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ডাঃ রক্ত পরীক্ষা করতে বলেছেন। এখানে রক্ত পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। পার্শ্ববর্তী প্রাইভেট ক্লিনিকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান আমরা গরীব মানুষ তাই সরকারি হাসপাতালে আসি। কিন্তু এখানে না পাই ঔষধ, না পাই পরীক্ষা-নিরিক্ষার সুযোগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তাপস কুমার তালুকদার জানান, ১৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে আমিসহ ৪জন আছি। ৫৬জন কর্মচারীর মধ্যে ২৮জনের পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে সেবা দেয়ার মানসিকতা থাকা সত্বেও পারছি না। বিশেষ করে কনসালটেন্ট না থাকায় হাসপাতালে কোন মেজর অপারেশন করা যাচ্ছে না, যা খুবই জরুরী। এছাড়া মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর অভাবে এক্সে মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত লিখেও কোন জনবল পাচ্ছি না। এমনকি আয়া, গার্ড ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কোন ব্যবস্থা করছে না কর্তৃপক্ষ।