দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে রাজনীতির আকাশে আবার কালো মেঘের আনাগোনা চলছে, যা নির্বাচন হওয়া নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা ও আশঙ্কা সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
২৫ জুলাই ( শুক্রবার) বিকালে, চট্টগ্রাম বিপ্লবী উদ্যানে গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জুলাই অভ্যুত্থানের একবছর পুর্তি ও শহীদদের স্মরণে ❝জুলাই সমাবেশ❞ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সাকি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ঐক্যবদ্ধ হোন, দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে রাজনীতির আকাশে আবার মেঘ আসছে বলে মনে হচ্ছে, যা নির্বাচন হওয়া নিয়ে একধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে হবে। এটা একসঙ্গে চলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটাবে। এটা এখন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। কাজেই যেকোনো ধরনের তৎপরতা যদি বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধেই যায়। কাজেই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
আগামী ৫ আগস্ট অথবা এর পরবর্তী দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী।
তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি করা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যথাসম্ভব ন্যায্য আচরণ করার মধ্য দিয়ে সরকারকে নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে।’
তিনি জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছেন, জনগণ ভরসা করতে পারে, সেভাবে যেন হতাহতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং ওই ঘটনায় গাফিলতি থেকে থাকলে তার স্বচ্ছ তদন্ত করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আসুন একসাথে কাজ করে গড়ে তুলি জনগণের বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ। সংস্কার ও নতুন বন্দোবস্ত টেকসই করতে আগামী জাতীয় নির্বাচন ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদে’র নির্বাচনের দাবিতে সংগঠিত হোন।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমীর সভাপতিত্বে, যুগ্ম-নির্বাহী সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আতিকুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী মোঃ হারুন, জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারি অপূর্ব নাথ, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরী, নারী সংহতির আহবায়ক নুরুন্নেসা মুন্নি, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হাসান মুরাদ হাসান সাহ,সম্পাদক মন্ডলী সদস্য এডভোকেট শাহাদাত হোসেন তালুকদার মানিক,সম্পাদক মন্ডলী মোরশেদ আলম, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জাহিদুল আলম আল-জাহিদ, মোহাম্মদ ইসহাক, সাধারণ সম্পাদক, হোটেল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন,। গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির নেতা মোঃ সোহাগ, কুতুব উদ্দিন,মোহাম্মদ সাইফুল। ছাত্র ফেডারেশন নেতা আজাদ হোসেন,শওকত ওসমান, মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, আবিদ শাহরিয়ার, আরিফুল হক। যুব ফেডারেশন নেতা শুভাশিস ভট্টাচার্য, মারুফ হোসেন, বহুমুখী হকার্স সমিতির নেতা সাধন দত্ত, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নেতা নুরুদ্দিন, সেলিম।
চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলার নেতাদের মধ্যে সাকি ভাই বিরলতমদের একজন। তিনি সবসময় প্রিসাইস কথা বলেন। বাংলাদেশের পুরাতন রাজনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নতুন রাজনীতি করার প্রেরণাটা আমরা কম বয়সে ওনাকে দেখেই লাভ করেছিলাম। এখনো উনি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় কথা বলেন।
বিচার, সংস্কার, নির্বাচন – সবগুলাই চাই আমরা। এসবের মধ্যে কোন বিরোধ নাই। একটা চাইলে আরেকটা হারাইতে হবে, এমন বস্তুগত ও বাইনারি শর্ত যারা তৈরি করেন, আমরা তাদের বিপক্ষে। আমরা “রাষ্ট্র মেরামত” কথাটি বলতে চাই। সংস্কারতো অন্তর্বর্তী সরকারও করছে। তাদের সংস্কারের অর্থ হলো সেই তত্ত্বাবধায়ক নির্ভর নব্বইয়ের গণতন্ত্রকে ফেরত আনা, যা গণতান্ত্রিক সংকট কেই অব্যাহত রাখবে। রাষ্ট্র ও রাজনীতির কোন প্রকৃত গুণগত রূপান্তর সাধন করবে না।
একটা কথা স্পষ্ট করে বলা দরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বৈপ্লবিক রূপান্তরের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা এখনো বাস্তবায়িত হয় নাই। আমাদের লক্ষ্য এই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করা। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি লড়াই। একাত্তরের পর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয় নাই। চব্বিশের পরেও আমরা আবার পথ হারাতে বসেছি। এখন জনগণের দরকার সেই কান্ডারী, ছুতার, ও নাবিকদের – যারা তাদেরকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দুর্গম নদীটি পার করে দেবেন। জননেতা জোনায়েদ সাকি ভাইয়ের হাত ধরে আমরা সম্মিলিতভাবে “তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর” পারি দিতে চাই।’