দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে এই আহ্বান উপেক্ষা করেই শনিবার (২৬ জুলা্ই) কম্বোডিয়ায় নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। তিন দিন ধরে চলা এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষের মোট ৩৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১৩০ জন।
থাই সংবাদমাধ্যম দ্য নেশন জানিয়েছে, থাই যুদ্ধবিমানগুলো কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী ফু মা কুয়া শহরে এবং তা মুয়েন থম মন্দির এলাকার সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। রয়টার্স এর খবর।
কম্বোডিয়ার সংবাদমাধ্যম খেমার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কম্বোডিয়ার কতৃপক্ষ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে। এছাড়াও বর্তমানে সশস্ত্র সংঘাতের সম্মুখীন এলাকাগুলোর আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে কতৃপক্ষ।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোর থেকে সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় মোট ৩৩ জন নিহত এবং ১৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষে কমপক্ষে আটজন বেসামরিক নাগরিক এবং পাঁচজন সৈন্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৭১ জন।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা দেশটির রাজধানী নম পেনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া থাই সেনাবাহিনীর ভারী কামান হামলায় রয়্যাল কম্বোডিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর (আরসিএএফ) ২১ সদস্য এবং কমপক্ষে ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ১৪ জন বেসামরিক এবং ৬ জন সেনাবাহিনীর সদস্য। এছাড়া ২৯ সৈন্য এবং ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংঘাতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৬ মানুষকে সরিয়ে নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন প্রিয়াহ ভিহিয়ার, ওদ্দার মিয়ানচে এবং পুরসাত প্রদেশের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মোট ৩৫ হাজার ৮২৯ জন বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে গত মে মাসে সংঘর্ষের সময় কম্বোডিয়ার এক সেনার মৃত্যুর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এর মধ্যেই চলতি মাসে সীমান্ত এলাকায় একের পর এক স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রতিবেশী দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে।
গত দুই মাসে দুই দেশই একে অন্যের বিরুদ্ধে সীমান্ত বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে এবং বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পরিষেবা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
গত ১৬ জুলাই বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সেনা পা হারান। পরবর্তী বিস্ফোরণ ঘটে গত বুধবার। এতে থাইল্যান্ডের অন্তত পাঁচ সৈন্য আহত হন। বিস্ফোরণে তাদের একজনের পা উড়ে যায়। কম্বোডিয়ায় বিতর্কিত এলাকায় মাইন পুঁতে রেখেছিল বলে অভিযোগ করেছে ব্যাংকক।
এর জেরে বুধবার রাতে কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে থাইল্যান্ড এবং ব্যাংককে নিযুক্ত কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয়। এরপরই বৃহস্পতিবারের ভোরে সেই উত্তেজনা সংঘর্ষে রুপ নেয়।
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ছয়টি এলাকায়, যেগুলোর ওপর দুই দেশেরই দাবি রয়েছে বহু দিন ধরে। শুরুতে হালকা অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হলেও পরে তা ভারী গোলাবর্ষণে রূপ নেয়। এটি ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সহিংস সশস্ত্র সংঘাত বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে উত্তেজনা ঘিরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। ভালো প্রতিবেশীর মনোভাব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘের সহকারী মুখপাত্র।
থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার সীমান্তে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চীনও। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং বলেন, উভয় দেশকেই সংযম দেখাতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে ফিরতে হবে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ড কাম্বোডিয়া পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসবে দুই দেশ। নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়ে এ বৈঠকের অনুরোধ করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। বৈঠকে পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দেবে জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তি স্থাপন বিভাগ।