চট্টগ্রামে সে এলিট কর্পোরেশনের নামে মিললো, নকল যৌন উত্তেযক ড্রাগ

চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে অবৈধ ও ভেজাল যৌন উত্তেজক ওষুধ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় দুই যুবককে গ্রেপ্তারও করা হয়। মূলত ‘এলিট করপোরেশন’ নামক একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান এসব ওষুধ প্রস্ততকারক।

সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত পৌনে ১২টার দিকে বন গবেষনাগার স্কুল সংলগ্ন সোনিয়ার মায়ের কলোনির একটি টিনশেড বাসা থেকে এসব ওষুধ জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার দুই যুবকের নাম আমীর হোসেন (২২) ও কফিল উদ্দিন (২০)।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ওই ঘরটিতে প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে ৫০ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যমানের ওষুধ ছিল। যেগুলো অবৈধ ও ভেজাল। এ ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান চলমান। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

ইন্টারনেট ঘেঁটে এলিট করপোরেশনের নামে দুটি ওয়েবসাইটের সন্ধান পাওয়া গেছে। উভয় ওয়েবসাইট দুটি ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে যৌন উত্তেজক পাউডার, চিকন স্বাস্থ্য মোটাকরণ, উচ্চতা বাড়ানো, স্বাস্থ্য কমানো—এমন কাজের বিভিন্ন ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হয়েছে।

এরমধ্যে এলিট করপোরেশনবিডি নামক ওয়েবসাইটে পুলিশের জব্দ করা এসব পণ্যের মূল্যসহ বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ১২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ হাজারেরও বেশি। ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা উল্লেখ নেই। তবে সেখানে পণ্য অর্ডার করার জন্য একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। সেই নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।

অন্যদিকে এলিটকরপো নামক আরেকটি ওয়েবসাইট পাওয়া গেছে ইন্টারনেট ঘেঁটে। ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা উল্লেখ না থাকলেও ‘সারা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা, প্রসাধনী ও মসলা জাতীয় পণ্য সরবরাহ করে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গুগল ম্যাপে প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে নগরের পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম নাসিরাবাদ ২ নম্বর গেইট এলাকার জালাল প্লাজা নামক ভবনে।

গুগল ম্যাপে এলিটকরপো ওয়েবসাইটের নিচে একটি মুঠোফোন নম্বরও রয়েছে। ওই নম্বরে কল করা হলে সৌরভ খান পরিচয় দিয়ে একজন যুবক দাবি করেন, তিনি একসময় এলিট করপোরেশনের এসব পণ্য নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে করেন না। পুলিশের অভিযানের বিষয়েও তার জানা নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যসেবা, প্রসাধনী ও মসলা জাতীয় পণ্য যদি মানসম্মত না হয় অথবা ভেজাল ও ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত থাকে, তবে সেগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা পণ্য দীর্ঘমেয়াদে শরীরে বিষক্রিয়া, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রসাধনীতে ক্ষতিকর কেমিকেল থাকলে তা ত্বকের অ্যালার্জি, চুলকানি, চুল পড়া, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।

অন্যদিকে ভেজাল মসলা খেলে হজমের সমস্যা, আলসার, গ্যাস্ট্রিক, লিভার ও পাকস্থলীর জটিলতা তৈরি হয় এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই এসব পণ্য ব্যবহারের আগে অবশ্যই মান নিয়ন্ত্রণ, বিএসটিআই অনুমোদন ও বিশ্বস্ত উৎস থেকে কেনা নিশ্চিত করা জরুরি।