লুটের বাংলাদেশ! পাথর কাণ্ডের পর এবার গাছ লুট

কোনো ধরনের অনুমতি বা দরপত্র ছাড়াই রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা ২০৫ বিঘার বিশাল ক্যাম্পাস থেকে শত শত গাছ লুট হয়ে গেছে।

গাছগুলো কেটে বিক্রি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব থেকেছে। গত কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে এবং গত এক মাসে ব্যাপকভাবে এসব গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।— বিডিনিউজ এর খবর।

অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও বালু ভরাট কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড যোগসাজশে এসব গাছ কেটে বিক্রি করেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর বলেন, “গাছ কাটার অনুমতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রায় ৭০০ গাছ কাটা হয়েছে। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, পুরো এলাকায় রয়েছে সাত হাজার ৩০০টি। যার মধ্যে ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজ করার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ কেটে ফেলার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো বিক্রির জন্য ‘সংখ্যা’ ফেলা হলেও এখনো কোনো দরপত্র হয়নি; গাছ কাটার জন্য কাউকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি। অথচ অসংখ্য গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাছের কাটা গোড়া মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে, কিছু গাছের গোড়া তুলে ফেলায় সেখানে গর্ত হয়ে পানি জমে আছে এবং কোথাও কোথাও জায়গা ফাঁকা করে শাকসবজি চাষও হচ্ছে।

রাজশাহীর সিলিন্দা এলাকায় এই জায়গাটি একসময় ছিল আম, মেহগনি আর নানা ফলজ-বনজ গাছে ভরা। এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে, পড়ে থাকা শুকনো ডালপালা, গোড়া থেকে কেটে নেওয়া আমগাছের কাণ্ড কিংবা কেটে ফেলে রাখা অর্ধশতাধিক গাছ। জমির ভেতর তৈরি হয়েছে ছোট ছোট গর্ত, যেখানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশ দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে শত শত গাছ আগে থেকেই কেটে ফেলা হয়েছিল।

স্থানীয়রা বলছেন, এক মাস ধরে ট্রলির পর ট্রলি গাছ এখান থেকে বাইরে নেওয়া হয়েছে।

ববিতা বেগম নামের স্থানীয় এক নারী বলেন, “মাঝে মাঝেই গাছ কাটা হত, তবে গত এক মাস ধরে প্রতিদিনই গাছ কেটে বাইরে নেওয়া হয়েছে।”

শারমিন বেগম নামের আরেক নারী বলেন, মঙ্গলবার সকালেও দুই ট্রলি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর আগের দুই দিনেও আরও চার ট্রলি গাছ কাটা হয়েছে।

দুই নারীই বলেন, একসময় যেখানে বাগান ছিল, এখন তা ফাঁকা মাঠে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, আগে এখানে একজন ব্যক্তির গরু ও ভেড়ার খামার ছিল। তিনিই তখন এই এলাকার দেখাশোনা করতেন। অধিগ্রহণ করার পর খামার সরিয়ে নিলেও ওই ব্যক্তিই চলতি বছর আম বাগানের আম বিক্রি করছেন।

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হাসিবুল হোসেন বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে তিনি অফিসিয়ালি কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত নন, তাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগতও নন।

উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।”

সম্প্রতি গাছ কেটে বিক্রির বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বালু ভরাটের কাজ পাওয়া হোসাইন কন্সট্রাকশন লিমিটেডকে শোকজ করে একটি চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশনের রাজশাহীর ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, তাদের কাজ কেবল বালু ভরাট করা। যেদিকে গাছ কাটা হয়েছে, সেদিকে তাদের কোনো কাজই নেই। তাই তারা দায়ী নন।

স্থানীয় অনেকের মতে, দীর্ঘদিন ধরে গাছ কাটার প্রক্রিয়া চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব থেকেছে। গত এক মাসে ব্যাপকভাবে গাছ কাটা শুরু হলে বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানি হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শোকজ নোটিশ দিতে বাধ্য হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, “বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। ক্যাম্পাসে গাছ রেখেও মূল অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব। তার উপর অনুমতি ছাড়াই এতোগুলো গাছ লুট হয়ে গেল। এর বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।”

রাজপাড়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, “যেখানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণ হবে সেখান থেকে বেশকিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। তবে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”