চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আগামী ১২ অক্টোবর (রবিবার) অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তফসিল ঘোষণা করেন চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।
তফসিল অনুযায়ী, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। খসড়া ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ করা হবে ২, ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫, ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ২১ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের বিষয়ে আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির শেষ সময় ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। আর আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চাকসু নির্বাচন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চাকসু নির্বাচন। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়বার চাকসু নির্বাচন হয়েছে। এর আগের তিনটি নির্বাচনে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসেছে। এর মাধ্যমে আমি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম।
চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ৩৬ বছরের অপেক্ষা অবসান হতে চলেছে। আমাদের শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবার একটিই চাওয়া, সেটি হলো চাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন সুস্থভাবে সম্পন্ন করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা সবাই মিলে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এটিই এখন একমাত্র প্রত্যাশা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি শিক্ষাবর্ষে এই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এতদিনে মাত্র ছয়বার নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ছাত্র সংগঠনগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, কয়েক দফা সংঘর্ষ ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে দীর্ঘ ৩৬ বছর চাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানটি গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসুর নিজস্ব কার্যালয় থাকলেও গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে সেটি ব্যবহৃত হয়েছে ক্যানটিন, কমিউনিটি সেন্টার ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের স্থান হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সন্তানদের বিয়ের অনুষ্ঠানও হয়েছে এই ভবনে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে। গত ১ জুলাই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চাকসু ভবনের নামফলকের ওপর ব্যঙ্গাত্মক ব্যানার টাঙান, যাতে লেখা ছিল— ‘জোবরা ভাতের হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টার।’
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৯টি অনুষদ, ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫ জন। এত বিপুল শিক্ষার্থীর জন্য কার্যকর ছাত্র সংসদ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব বিকাশ, সাংগঠনিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ শূন্য ছিল।
আসন্ন চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সেই শূন্যতা পূরণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।