বাংলাদেশের জলবায়ু সংকটের গল্প বিশ্বে তুলে ধরতে হবে: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের প্রতিটি খাতকে আঘাত করলেও সেই গল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথাযথভাবে পৌঁছায় না। ফলে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

তিনি সাংবাদিকদের জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বাংলাদেশের হোমগ্রোন গল্পগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে শক্তিশালী যুক্তি তৈরি করতে হলে গণমাধ্যমকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।’

সোমবার পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যৌথ আয়োজনে ‘নেভেগেটিং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স: মিডিয়া রিপোর্টিং’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রেস সচিব এ কথা বলেন।

রাজধানীর পিকেএসএফ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বক্তব্য রাখেন।

প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আমাদের ১৮ কোটি মানুষ সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাইক্লোন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও নোনাজলের বিস্তার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের গল্পগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পৌঁছায় না। বিদেশি গণমাধ্যম মাঝে মাঝে এদেশে টিম পাঠিয়ে প্রতিবেদন করলেও দেশীয়ভাবে প্রস্তুত গল্পগুলো বৈশ্বিক অঙ্গনে জায়গা পায় না।’

তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ভেতরে সিলেটের পানির সংকট, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ততা, কিংবা ভবদহের জলাবদ্ধতার মতো সমস্যাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব। কিন্তু এসব ঘটনা মিডিয়ায় মৌসুমি কাভারেজ পেলেও আন্তর্জাতিক আলোচনায় জায়গা করে নিতে পারে না।

‘ভবদহে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকে। মৌসুম শেষে এ বিষয়টি আর সংবাদে থাকে না। অথচ এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বড় উদাহরণ। এভাবে হাজারো গল্প রয়েছে যেগুলো আমাদের সংবাদ কভারেজের বাইরে থেকে যাচ্ছে,’ বলেন প্রেস সচিব।

শফিকুল আলম উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গেও এটি জড়িত। তিনি উদাহরণ হিসেবে ডেঙ্গুর বিস্তার, মাতৃস্বাস্থ্য সংকট ও উর্বরতার হার পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে—সামাজিক টেনশন, স্বাস্থ্যঝুঁকি বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা—জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এই গল্পগুলো আমরা বাইরে তুলে ধরতে পারি না। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের কেস তৈরি হয় না এবং আমরা প্রত্যাশিত ফান্ডিং থেকে বঞ্চিত হই।’

প্রেস সচিব সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, জলবায়ু সাংবাদিকতা এখন এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক বিল ম্যাককিবেন ও এলিজাবেথ কোলবার্টকে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরও এ ধরনের গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।