প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদকে সামনে রেখে আয় বাড়াতে দিন-রাত সমান ভাবে নিরালশ হয়ে কাজ করছেন নগরীর সেলাই (দর্জি)কারিগররা। ফ্যাশন আর রুচিশীল ব্যক্তিরা ছুটছেন টেইলার্সের দোকানে। আর অনটাইম ফ্যাসনে তৃপ্তি দিচ্ছে গার্মেন্টস দোকান ব্যবসায়ীরা। এ ঈদ কেন্দ্রীক সেলাই কারিগরদের ব্যস্ততা থাকছে। তবে চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতাদের হাতে পোশাক তুলে দিতে দিন-রাত নিরালশ হয়ে শ্রম বিনিয়োগ করছেন এই কারিগররা।
আমতলী একস্কুল মহিলা কলেজ রোডের পাঞ্জাবী পাজামা প্রস্তুতকারক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন,গত এবছর কাজের চাপ অনেক বেশি এবং কাষ্টমারও অনেক বেশি। এ বছর আমাদের টেইলার্সের অনেক সফলতা আসবে।
আমতলী সদর ঘুরে জানাগেছে,মো: মিজান টেইলার্স প্রতি বছর ২০ রোজা পর্যন্ত অর্ডার নিয়ে থাকি। এবার তুলনামূলক কাজের চাপ কম। তার টেইলার্স এ সালোয়ার-কামিজের অর্ডার বেশি হচ্ছে। এবার পাকিস্তানী জর্জেট কাপড়ের অর্ডার অনেক বেশি।
মারিয়া লেডিস ফ্যাসনে পোষাক নিতেন আসা মারুফা ইয়াসমিন বলেন, টেইলার্স এ অর্ডার দিলে মনের মতো করে কাপড় বানানো যায়। তাই উনি প্রতি ঈদে এখান থেকে বোরখা বানান।
সেই থেকে এই টেইলার্স‘র জামা-কাপড় পরে আসছি। সেই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। আমার পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলেও আমি টেইলার্সের কাপড় বানিয়ে পড়তে পছন্দ করি।
আমতলী কলেজ রোডের উকিল পট্টির মাসুদ টেইলার্স বলেন, অনলাইন ও রেডিমেড কাপড়ের কারনে টেইলার্সগুলো প্রায় ধ্বংসের মুখে। বিগত দশ বছর আগে রোজা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিতাম। এখন অর্ডার নাই বললেই চলে।
একটি সালোয়ার-কামিজ বানাতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি ধরা হয়। এর অর্ধেক চলে যায় কারিগরদের পিছনে। আগে আমরা রোজাতে দিন-রাত সময় পেতাম না। ১১ রোজায় দোকানে তেমন অর্ডার নাই।
সদর রোডের জাফর টেইলার্স বলেন, আমাদের টেইলার্সের অর্ডার এখনো নিচ্ছি। তবে আগের চেয়ে এবার অর্ডার অনেক কম। তিনি আরও বলেন, অনলাইনের প্রভাব কিছুটা আমাদের টেইলার্সেও পড়েছে।
একেস্কুল মহিলা কলেজ রোডের জাহিদ টেইলার্স বলেন, এবার পাকিস্তানী জর্জেটের কাজ অনেক বেশি। এবার ইন্ডিয়ান কাপড়ের অর্ডার খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। সরজমিনে নগরীর কয়েকটি টেইলার্স ঘুরে দেখা যায়, সালোয়ার-কামিজ বানাতে ৩০০ থেকে ৩৫০, ব্লাউজ ১৫০, ব্লাউজ (ডবল) ৩০০, পেটিকোট ৮০ থেকে ১০০, ম্যাক্সি ১২০ থেকে ১৩০, গাউন ৩০০ থেকে ৪০০, বোরকা ৩০০ থেকে ৫০০, শিশুদের ফ্রগ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি নেয়া হয়।
ডিজইনের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যেমন খুব বেশি ডিজাইন থাকলে ১০০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত মজুরি ধরা হয়, ব্লাউজ ও বোরকার অর্ডার বেশি নগরীর এই টেইলারগুলোতে।
আমতলী সদর রোডের লিটন টেইলার্স বলেন, মেয়েরা যেমন নিত্যনতুন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক বানাতে আসেন, তেমনি ঈদের সময় শার্ট-প্যান্টের চেয়ে ছেলেদের বেশি আগ্রহ পাঞ্জাবিতে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আঁচ লেগেছে দোকানগুলোতেও।
যেখানে আমরা একটি প্যান্ট বানাতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি নিয়ে থাকি। এই মজুরির টাকা দিয়ে একজন সহজে রেডিমেড প্যান্ট পেয়ে যাবেন যে কোনো শো-রুমে গেলেই। শার্টের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ৩০০ থেকে ৫০০ মজুরি দিয়ে শার্ট বানিয়ে না পড়ে ওই টাকা দিয়ে একটি রেডিমেড শার্ট দোকানে পাওয়া যাবে। তাই ছেলেদের পোশাক তৈরির টেইলার্সগুলো ঈদের বাজারে খুব একটা ব্যস্ত সময় পার করেন না।