‘রবীন্দ্র কাছারি বাড়ী’ ভাংচুরে ভারতীয় দাবি বিভ্রান্তিকর ঃ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটায় ভাঙচুরের ভারতীয় দাবি বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
গতকাল মঙ্গলবার সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সম্প্রতি, ভারতীয় সরকার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং হিন্দুত্বপন্থী সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটায় একটি ভাঙচুরের ঘটনাকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় বিরোধ থেকে সৃষ্ট ঘটনাটিকে ‘সংগঠিত ইসলামপন্থী হামলা’ বা ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ হিসেবে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যদিও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন: ‘এই হামলা হচ্ছে উগ্রপন্থীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহনশীলতা ও সমন্বয় সংস্কৃতির নিদর্শন মুছে ফেলার ধারাবাহিক চেষ্টার অংশ।’
এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী ঘটনাটিকে ‘চমকপ্রদ ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করে দাবি করেন, এটি ‘মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের নীরব দৃষ্টিতে’ ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল ভাঙচুর নয়, পূর্বপরিকল্পিত ঘৃণামূলক অপরাধ।’
বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্রা অভিযোগ করেন, ‘হামলাটি জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে তিনটি বিষয় বলতে চাই: বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সঠিক আচরণ করছে না, কোনো তদন্ত করেনি, যা খুবই নেতিবাচক বার্তা দেয়, আমি বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের আচরণকে তীব্র নিন্দা জানাই।’
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, ‘বিএনপি ও ছাত্র শিবিরের নেতৃত্বে একটি জনতা ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙচুর করেছে।’
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঘটনাটিকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘অসহনীয়’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এক্স-এ লেখেন: “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িও রক্ষা পায়নি – বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভাঙচুর হয়েছে। একটি প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠছে শুধু হিন্দু ছিলেন বলেই কি রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশে এখন ‘অপরাধী’?”
এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিজেপি বিধায়ক ভগবান দাস বলেন, এটি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত একাধিক ‘বর্বর ঘটনার’ একটি।
তবে প্রেস উইং দাবি করেছে, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। তদন্ত ও সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, হামলায় কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। এটি কোনো উগ্র গোষ্ঠীর বা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত হয়নি।
বাংলাদেশি একাধিক নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌরসভা এলাকার রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে ১০ জুন একদল উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালায়, যা প্রবেশ টিকিট নিয়ে এক দর্শনার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঘটে।
ঘটনাটি ঘটে গত ১০ জুন, রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়ি প্রবেশ টিকিট নিয়ে স্থানীয় বিরোধের জেরে উত্তেজনা ছড়ায়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ঈদের দ্বিতীয় দিন (৮ জুন) প্রবাসী দর্শনার্থী শাহনেওয়াজ হোসেন ও তার স্ত্রী টিকিট না কেটে জাদুঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় তর্কাতর্কি ও পরে কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
পরে শাহনেওয়াজ শাহজাদপুর থানায় ৬ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
১০ জুন তিনি ও স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন করেন। পরে সেদিনই ৫০-৬০ জনের একটি দল কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়াম ও কাস্টোডিয়ানের অফিসে ভাঙচুর চালায় বলে প্রেস উইং জানায়।
১৩ জুন, বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ঘটনাটি ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে হয়েছে, এর পেছনে কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৮ জুন, শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কর্মচারী ও এক দর্শনার্থীর মধ্যে পার্কিং টিকিট নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও তর্কাতর্কির জেরে সংঘর্ষ হয়।’
বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্রার দাবি অস্বীকার করে প্রেস উইং জানায়, জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নেতৃত্বে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একটি ফৌজদারি মামলাও করেছে। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে: ‘এই হামলার পেছনে কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, এটি কেবল ব্যক্তিগত বিরোধ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মান ও মর্যাদা অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’