কুকুর খোঁজে দিচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরল প্রজাতির কচ্ছপ

কেপটাউনের কাছে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকায় ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে মাটিতে নাক ঘেঁষে ছুটে চলছে একটি বর্ডার কোলি কুকুর, নাম তার ডেল্টা। সে খুঁজছে এক বিশেষ বিপন্ন প্রাণী—দক্ষিণ আফ্রিকার বিরল প্রজাতির কচ্ছপ।

একটি ঝোপের সামনে হঠাৎ থেমে গিয়ে ডেল্টা শুয়ে পড়ে- এটি তার সংকেত, সে কিছু পেয়েছে। ডেল্টার প্রশিক্ষক ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা এস্তার ম্যাথিউস এগিয়ে এসে দেখেন, ঘাসের ফাঁকে ছোট্ট একটি কচ্ছপ, যার খোলসের গায়ে তারার মতো হলুদ ছাপ।

‘এটি একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী কচ্ছপ,’ বলেন ম্যাথিউস, ‘এর পেট সমতল হওয়ায় তা বোঝা যায়।’ তিনি জানান, এটি হলো ‘জিওমেট্রিক কচ্ছপ’, যে প্রজাতিটি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণপ্রান্তেই পাওয়া যায়।

ম্যাথিউস বলেন, তাদের সংস্থা এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করছে এই প্রজাতির খোঁজে, কচ্ছপের গন্ধের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করে তারা। কচ্ছপ খুঁজে পেলে কুকুরদের পুরস্কার হিসেবে ফোম ফ্রিসবি দেওয়া হয়।

‘মানব খোঁজকারীদের তুলনায় কুকুর পাঁচ গুণ বেশি দক্ষ,’ বলেন তিনি। ‘ছোট কিংবা নবজাত কচ্ছপ, যেগুলো প্রায়ই চোখ এড়িয়ে যায়, সেগুলোকেও কুকুরেরা সহজেই খুঁজে বের করতে পারে।’

জিওমেট্রিক কচ্ছপ মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশে পাওয়া যায় এবং বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। কেপ ন্যাচারের জীববিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু টার্নার বলেন, ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বন্য পরিবেশে এই প্রজাতির সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় হাজার। এখন তা কয়েক শতজনে নেমে এসেছে।

ডেল্টা ও ম্যাথিউস মিলে তাদের সহযোগীদের সহায়তায় একটি সংরক্ষিত বনভূমিতে প্রায় ডজনখানেক কচ্ছপ খুঁজে পেয়েছেন। প্রতিটি কচ্ছপের পরিমাপ ও ওজন রেকর্ড করা হয়।

টার্নার বলেন, নগরায়ন ও কৃষিকাজের কারণে কচ্ছপদের স্বাভাবিক বাসস্থান দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে।

‘কিছু রিজার্ভ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ছাড়া এ প্রজাতির বাসযোগ্য পরিবেশ আর তেমন বাকি নেই,’ বলেন তিনি।

‘বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এইসব ক্ষুদ্র বনের মধ্যে যোগাযোগের কোনো পথ নেই। মাঝখানে চাষের জমি, রাস্তা ও বসতি—ফলে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে নতুন প্রজাতি গঠনের সুযোগ থাকছে না।’

শুষ্কতা, আগুন ও শিকারিদের কবল—সবকিছুই এই বিচ্ছিন্ন অবস্থাকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগুন ও খরার তীব্রতা বাড়ছে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

‘তাদের সংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে এখন তাদের রক্ষা করতে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রয়োজন,’ বলেন টার্নার।

প্রজাতিটি রক্ষা করতে এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট ভূমি মালিক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ার চেষ্টা করছে।

সংস্থাটির শুষ্ক ভূমি সংরক্ষণ কর্মসূচির প্রধান জানে ব্রিঙ্ক বলেন, ‘প্রজাতিগুলো যেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে পারে এমন সংযোগ করিডোর তৈরি করাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করে এমন সব এলাকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করা, যেগুলো টিকে থাকা জীববৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য।’