৯/১১ মূল হোতার দোষ স্বীকারের চুক্তি বাতিল করেছে মার্কিন আদালত

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত শুক্রবার ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদের দোষ স্বীকার সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করেছে, যা তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা করত এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলার নিষ্পত্তির পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করত।

এই চুক্তি হামলায় নিহতদের কিছু আত্মীয়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। পরে তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন চুক্তিটি বাতিল করেন। তিনি যুক্তি দেন যে নিহতদের পরিবার এবং আমেরিকান জনগণ এই মামলার পূর্ণাঙ্গ বিচার দেখার ‘দাবি রাখে’।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, বিচারপতি প্যাট্রিসিয়া মিলেট ও নিয়োমি রাও তাদের রায়ে বলেন, অস্টিন ‘আইনগত কর্তৃত্বের মধ্যেই কাজ করেছেন এবং আমরা তার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না।’

২০২৪ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে খালিদ শেখ মোহাম্মদ এবং তার দুই সহযোগী ওয়ালিদ বিন আটাশ ও মুস্তাফা আল-হাওসাওয়ির সঙ্গে দোষ স্বীকার সংক্রান্ত চুক্তি ঘোষিত হয়।

প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, এসব চুক্তির ফলে দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত থাকা মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হতে পারে, যেহেতু অভিযুক্তরা গুয়ারান্তানামো বে-তে আটকে ছিলেন এবং বছরের পর বছর ধরে প্রাক-বিচার প্রক্রিয়ায় মামলাগুলো আটকে ছিল।

তবে চুক্তি ঘোষণার মাত্র দুই দিনের মাথায় অস্টিন তা প্রত্যাহার করে বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তারই।

পরে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য, আমাদের সেবাদানকারী সৈনিক এবং আমেরিকান জনগণের এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সামরিক বিচার দেখার সুযোগ পাওয়া উচিত।’

২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর এক সামরিক বিচারক রায় দেন যে চুক্তিগুলো বৈধ এবং বাধ্যতামূলক। কিন্তু সরকার সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে।

শুক্রবার আপিল আদালত বিচারকের সেই আদেশ বাতিল করে দেয় এবং সামরিক বিচারককে নিষিদ্ধ করে যে তিনি এই চুক্তির ভিত্তিতে কোনো শুনানি নিতে পারবেন না বা অভিযুক্তদের দোষ স্বীকার করতে দিতে পারবেন না।

৯/১১-র আসামিদের ঘিরে দীর্ঘদিনের আইনি বিতর্কের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে সিআইএ-এর নির্যাতনের বিষয়টি. যা চুক্তির মাধ্যমে এড়ানো যেত।

২০০৩ সালের মার্চে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে খালিদ শেখ মোহাম্মদ ছিলেন আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী। তিনি তিন বছর সিআইএ-এর গোপন বন্দিশিবিরে ছিলেন, তারপর ২০০৬ সালে গুয়ান্তানামো বে’তে আনা হয়।

প্রকৌশলী খালিদ শেখ মোহাম্মদ বলেছেন যে তিনি ৯/১১ হামলা ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত’ পরিকল্পনা করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা গ্রহণের সময় একাধিক বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র গুয়ারান্তানামো নৌঘাঁটিকে এমন একটি স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছিল, যেখানে বন্দিদের আটক রেখে তাদেরকে মার্কিন আইনের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা যায়। এক সময় এই বন্দিশিবিরে ৮০০-এর বেশি বন্দি থাকলেও এখন সেখানে খুব অল্প সংখ্যক বন্দি রয়ে গেছে।