অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আনুষ্ঠানিকভাবে পঠিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরের ঘটনায় নিহতদের বিচার নিয়ে কোনো বক্তব্য না থাকায় তীব্র হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
বুধবার (৬ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে হেফাজতের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান বলেন, শাপলা চত্বরের গণপ্রতিরোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও তৌহিদি জনতা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ দলে দলে অংশ নিয়েছে। অথচ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাঠ করা ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ শাপলা গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি তো নেই-ই, কোনো ধরনের উল্লেখও করা হয়নি!
তারা বলেন, ঘোষণাপত্র পাঠকালে হেফাজত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এমনটি হয়েছে। ফলে এটি যে সচেতনভাবে করা হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ওলামায়ে কেরাম ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা এতে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা হতাশ ও বিস্মিত! সামনে দিন আরো আছে। এই উপেক্ষার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের মনে থাকবে।
তারা আরও বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে দেশের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা শাহবাগপন্থী আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও হিন্দুস্তানি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে গণজাগরণ ও গণআন্দোলনের ইতিহাস রচিত হয়েছিল, তা ছিল নজিরবিহীন। ওই বছরের ৫ মে ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সেদিন রাতের আঁধারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে, নিরীহ-নিরস্ত্র আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসাছাত্রদের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার যৌথবাহিনী। বহু লাশ গুম করা হয়। এই নারকীয় গণহত্যা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।
তারা আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরবিরোধী গণপ্রতিরোধেও জীবন দিয়েছেন প্রায় দুই ডজন আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শাপলা চত্বরে শহীদ হওয়া আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসাছাত্রদের পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা আজও সেই ভয়াল রাতের ট্রমা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। তাঁরা এখনো ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে ভয় পান, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
তাদের অভিযোগ, এখনো গণহত্যাকারী হাসিনার সাজানো প্রশাসন ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। অত্যাচারীরা এখনো বহাল।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সাক্ষীদের দীর্ঘদিনের মানসিক ভয় ও আস্থাহীনতা কাটাতে হলে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় শাপলা গণহত্যার বিচার কার্যকরভাবে আগানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে যে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তার মূল প্রেরণা ও পথিকৃৎ ছিল হেফাজতে ইসলাম।
তারা বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজত যদি শাহবাগপন্থী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াত, তবে বাংলাদেশ বহু আগেই সামরিকভাবেও দিল্লির এক উপনিবেশে পরিণত হতো।
নেতারা আরও বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার প্রতিটি সংগ্রামে ওলামায়ে কেরাম অসামান্য আত্মত্যাগ করেছেন। এই ইতিহাস কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার চক্র তা যতই চেষ্টা করুক, তাতে তারা সফল হবে না—ইনশাআল্লাহ।