ভ্রমণপ্রিয় ছোট পর্দার, কেয়া পায়েল

ঘোরা আমার নেশা। সময় পেলেই ছুটে যাই দেশের বাইরে। কয়েক মাস ধরে মনে ছিল ট্যুর দেওয়ার ইচ্ছা—অবশেষে সুযোগ এল। গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্ক সিটিতে পা রাখতেই মনে হলো, আমি যেন এক বিশাল সিনেমার সেটে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে প্রতিটি রাস্তা আর প্রতিটি মোড় গল্প বলে। ঠিক করেছিলাম, শুধু ব্রডওয়ে বা টাইমস স্কোয়ার নয়—দেখব একটু ভিন্ন স্বাদের জায়গা। সেই ভাবনা থেকেই এক সকালে রওনা হলাম কনি আইল্যান্ডে।_ কেয়া পায়েলের অনুভূতি ব্যক্ত।

সকালের মোলায়েম রোদ, আটলান্টিকের হাওয়া আর চারপাশের উচ্ছল ভিড়—সব মিলিয়ে কনি আইল্যান্ড যেন উৎসবের শহর। সমুদ্রের ঢেউ যখন পায়ের পাতায় ছুঁয়ে গেল, মনে হলো বাস্তব জীবনের ছুটি যেন আরও বাস্তব হয়ে উঠল। বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, তাদের বাংলায় ইংরেজি মেশানো কথা—সব মিলিয়ে আনন্দময় সময় কেটেছে। চোখে পড়ল বিখ্যাত ওয়ান্ডার হুইল—শৈশবের মেলার ফেরিস হুইলের চেয়ে বিশাল ও রঙিন। ওপরে উঠে একদিকে আটলান্টিকের নীল জলরাশি, অন্যদিকে ঝলমলে শহর—দুটি দৃশ্য যেন এক ফ্রেমে বন্দি হলো। রাস্তার শিল্পীরা গান বাজাচ্ছেন, শিশুরা বেলুন নিয়ে দৌড়াচ্ছে—এ যেন নিউইয়র্কের আরেক রঙিন মুখ।

পরের দিন গেলাম ম্যানহাটানে। কনি আইল্যান্ডের ঢেউ ছিল মৃদু, আর ম্যানহাটানের গতি নদীর স্রোতের মতো তীব্র। আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, ভিড়, অসংখ্য দোকান আর ক্যাফে—শহরটা যেন ঘুমোয় না। বিশাল স্ক্রিনের বিজ্ঞাপন আর আলোর ঝলকানি দিন-রাতের সীমানা মুছে দিয়েছে। পর্যটকদের ভিড়, রাস্তার অভিনয়শিল্পী, ছবি তোলা মানুষ—সব মিলিয়ে মনে হলো আমি বিশ্ব নাগরিকদের ভিড়ে মিশে গেছি।

ভ্রমণের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা ছিল নায়াগ্রা জলপ্রপাত। সূর্যোদয়ের সোনালি আলো, দুপুরের প্রখর রোদ, গোধূলির লাল আভা কিংবা রাতের আলোকসজ্জা—প্রতিটি সময়ে নায়াগ্রা যেন নতুন রূপে ধরা দেয়। গাঙচিলের উড়াউড়ি, সবুজ ঘাস, আর জলপ্রপাতের ধারাবাহিক গর্জন—সবকিছু মিলে মনে হলো প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় অবস্থিত এই জলপ্রপাত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। কাছ থেকে দেখার জন্য ছোট জাহাজে চড়লাম, অবজারভেশন এলাকা থেকেও উপভোগ করলাম এর মহিমা।

নায়াগ্রাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা বিনোদনকেন্দ্র—ক্যাসিনো, পার্ক, মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারি, শপিংমল। এখানে পরিবার নিয়ে আসা মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি, ছবি তুলেছি। জলপ্রপাতের কাছাকাছি গেলে প্রতি মিনিটেই সূক্ষ্ম কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছিলাম—প্রকৃতির সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠতা অবিস্মরণীয়।

পুরো ভ্রমণ শেষে মনে হলো, নিউইয়র্ক এক শহরে হাজার শহরের গল্প লুকিয়ে রেখেছে। কনি আইল্যান্ডের নির্ভার আনন্দ, ম্যানহাটানের ব্যস্ততা আর নায়াগ্রার বিস্ময়—সব মিলিয়ে এই সফর ছিল এক পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা। শুটিং, কাজের চাপ, জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও চোখ বন্ধ করলেই এই স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেবে—পৃথিবী কত সুন্দর আর বৈচিত্র্যময়।