খাগড়াছড়িতে গত দশ দিনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরির পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ‘অস্থিতিশীল’ করার এবং পাহাড়ি-বাঙালি ‘দাঙ্গা’ বাঁধানোর বড় ধরনের ‘ষড়যন্ত্র দেখছে সেনাবাহিনী।
আর সেজন্য পাহাড়ি সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট–ইউপিডিএফকে দায়ী করা হয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে। -খবর বিডিনিউজ এর।
সেখানে বলা হয়েছে, “বিগত কয়েক দিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, ইউপিডিএফ এবং তার অঙ্গসংগঠন সমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে এলাকার মহিলা এবং স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের বিভিন্ন পন্থায় তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধ্য করছে।”
এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ১৪৪ ধারার মধ্যেই রোববার দুপুরে সেখানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, গুলিতে নিহত হয়েছেন আন্তত তিনজন।
এই পরিস্থিতিতে রাতে আইএসপিআর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং গুইমারা এলাকার ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে সেনাবাহিনীর একটি ব্যাখা হাজির করা হয়।
এবারের ঘটনাপ্রবাহের মূল খুঁজতে গিয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে আইএসপিআর।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) মূল এবং অঙ্গসংগঠনসমূহ দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
“ফলশ্রুতিতে তিন জন নিহতসহ বেশ কিছু এলাকাবাসী আহত হয়। ওই ঘটনার এক বছর পূর্তি হিসাবে এই বছর ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল এর আয়োজন করে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করে।”
এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। তারপর থেকেই বিক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছে পার্বত্য এই জেলায়।
ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ বুধবার শয়ন শীল নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’।
এরপর শনিবার ভোর ৫টায় ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা।
এ বিষয়ে আইএসপিআরের ভাষ্য, “স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউপিডিএফ (মূল) এর দাবিকৃত সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ঘটনাটির সত্যতা বিচারে আইনি প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে।
“শয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করা সত্ত্বেও ইউপিডিএফ এর অঙ্গসংগঠন পিসিপি এর নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদী মানববন্ধনের ডাক দেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ইউপিডিএফ এর আহ্বানে খাগড়াছড়িতে অর্ধবেলা হরতাল পালিত হয়।
“একই সময় দেশে বিদেশে অবস্থানরত ব্লগার এবং পার্বত্য অঞ্চলের কিছু দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ কর্তৃক অনলাইনে বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ২৬ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ এর কর্মী উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে এবং সামাজিক মাধ্যমে দেশি ও প্রবাসী ব্লগারসহ পার্বত্য জেলার কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির উসকানিমূলক প্রচারণার প্রভাবে সমগ্র খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে এক পর্যায়ে ইউপিডিএফ এর প্ররোচনায় উশৃঙ্খল এলাকাবাসী টহলরত সেনাদলের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
“ফলশ্রুতিতে তিনজন সেনা সদস্য আহত হয়। সার্বিক পরিস্থিতি এবং উসকানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য্য, সংযম ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।”
গত ২৭ সেপ্টেম্বরের পরিস্থিতি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “ইউপিডিএফ এবং অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা আবারো দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন স্থানে বাঙালি সহ সাধারণ মানুষের উপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ এবং রাস্তা অবরোধসহ নাশকতা করে সমগ্র খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায়।
“উক্ত দিন দুপুর নাগাদ সামগ্রিক বিষয়টি পাহাড়ি-বাঙালির একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। অবস্থা বিচারে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এমতাবস্থায়, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম ধৈর্য্যের সাথে সারা রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং একটি অবশ্যম্ভাবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিহত করা সম্ভবপর হয়।”
তারপরও পরিস্থিতির অবনতির জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে বিবৃতিতে বলা হয়, “খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠন সমূহ আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ জনগণকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে গুইমারা-খাগড়াছড়ি রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়।
“আজ সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় ইউপিডিএফ কর্মী এবং সন্ত্রাসীরা এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া তে লিপ্ত হয়। এই পর্যায়ে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট-পাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর ০৩ জন অফিসারসহ ১০ জন সদস্য আহত হয়।
“একই সময় তারা রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিজিবি সদস্যদের আহত করে। সংঘর্ষ চলাকালীন আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে, ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়।”
আইএসপিআর বলছে, “এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর টহল দল দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় গমন করে। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় উক্ত সশস্ত্র দলটি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।
“সমসাময়িক সময়ে রামসু বাজার এবং ঘরবাড়িতে ইউপিডিএফ (মূল) এর বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করে এবং বাঙালিদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রামসু বাজার এবং গুইমারা এলাকায় অতিরিক্ত সেনাদল নিয়োগ করা হয় এবং বিকাল ৪.৩০ মিনিটের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।”
দুপুর ও বিকালের সহিংসতার পর তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ নেওয়া হয় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে। তবে আইএসপিআরের বিবৃতিতে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
সন্ধ্যার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়, “গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিন জন পাহাড়ি নিহত এবং মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিন জন পুলিশ সদস্য এবং আরো অনেকে আহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
“মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করে শান্ত থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তিনজন যুবক মারা গেছেন। কয়েকজন আহত আছেন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারা গুলিতে না ঢিলের আঘাতে মারা গেছে, সেটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পওয়ার পর জানা হবে।”
খাগড়াছড়ি জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের বলেন, “গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের লাশ এসেছে হাসপাতালে। লাশগুলো মর্গে রাখা হয়েছে। আগামীকাল সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে।”
গুইমারার ঘটনায় আহত আরো চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।
পরে রাতে আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউপিডিএফ এবং অঙ্গসংগঠনগুলো ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে’ নারী ও শিশুদের দিয়ে ‘নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড’ চালাচ্ছে।
“একই সাথে পার্বত্যাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের লক্ষ্যে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আজ বিকালে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন কর্তৃক স্থাপিত চেকপোস্টে ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসী সংগঠন কর্তৃক পরিবহনকৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র যাত্রীবাহী বাস হতে জব্দ করা হয়।”
আইএসপিআর বলছে, “বিগত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং গুইমারা এলাকায় বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে আইনের আশ্রয় না নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের বিষয়টি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রমাণাদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট সংরক্ষিত আছে।
“বিগত কয়েকদিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণকে সংযত আচরণ করার জন্য আহবান জানাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “সকল ধরনের অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারণা, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য এই অংশের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
যা বলছে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’
এর আগে রাতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র এক ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়, “২৭ সেপ্টেম্বর থেকে খাগড়াছড়িতে আমাদের শান্তিপূর্ণ অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ সততার সাথে চলছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে খাগড়াছড়ি শহরজুড়ে সেনাবাহিনীর ব্যাপক তল্লাশি, মারধর ও ধারপকড়ের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে – যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।
“তদুপরি গুইমারায় জুম্ম ছাত্র-জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ এবং সেটলারদের দ্বারা দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের নির্মম প্রতিবেদন এসেছে। সেনা ও সেটলারদের হামলায় চার জন নিহত এবং বহু জন আহত হয়েছেন। আমরা এই বর্বরতা ও ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি কঠোরভাবে নিন্দা জানাই এবং প্রতিবাদ করছি।”
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় সড়ক অবরোধ অনির্দিষ্টকাল চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় ওই ফেইসবুক পোস্টে। সেখানে বলা হয়, সকল পর্যটন কার্যক্রমও এ সময় বন্ধ থাকবে।
তাদের দাবিগুলো হল–
>>আলোচনার শুরু থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত যে কোনো প্রকার হামলা, সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে এবং সেই নিশ্চয়তা দেবে।
>>ধর্ষণ মামলার অবশিষ্ট দুই আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার চয়ন শীল (শয়ন শীল) এর বিচার ত্বরান্বিত করে দণ্ড কার্যকর করা ও তা সরকারি গেজেটে বিজ্ঞাপন করে প্রকাশ করতে হবে। ভুক্তভোগীকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
>>২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ঘটে যাওয়া লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণের ঘটনাসহ সমস্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ আইনানুগ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে একটি অফিসিয়াল তদন্ত প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে দিতে হবে।
>> নিরীহ ও নিরস্ত্র জুম্ম ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত ‘বর্বরোচিত হামলা’, দোকানপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগে সৃষ্ট ক্ষতির পূর্ণ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে; পাশাপাশি আহত সবার সুচিকিৎসার দায়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
>> শান্তিপূর্ণ অবরোধে ‘বিনা উসকানিতে আক্রমণ’ এবং জুম্ম আদিবাসীদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনায় পূর্ণ ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিকার দিতে হবে।
>> চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আটক সকল জুম্ম ছাত্র-জনতাকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হামলার স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
>>আলোচনার টেবিলে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্র-জনতা প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সাধারণ জনগণ, ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
>> গুইমারাতে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করতে হবে।
এসব দাবি পূরণ না হলে ‘আরও কঠোর এবং সুসংগঠিত আন্দোলনে’ যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
